অপূর্ব দে, আগরতলা
বিশ্বজুড়ে এখন পর্যটন আর বিনোদনের নানা নাম | ভ্রমণ, আউটিং, থেকে শুরু করে রন্ধনশিল্পের পর্যটন কালিনারি ট্যুরিজমের মুন্সিয়ানাকে ঘিরে বেড়িয়ে আসা পর্যন্ত, সবই এখন পর্যটন আর ভ্রমণের পর্যায়ে পড়ে | পৃথিবীর বহু দেশে এমনকি আমাদের দেশেরও নানা প্রান্তে এ ধরনের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ নতুন করে সৃষ্টি করা হয়েছে | কিছুই ছিল না এমন জায়গাগুলোকে পরিকল্পনা করে নানা রূপ দেওয়া হয়েছে| পাহাড় সমুদ্র মরুভূমি স্থাপত্য ইত্যাদি যেখানে আছে, সেগুলোকে সামান্য কিছু এদিক-ওদিক করে অনেক জৌলুসপূর্ণ বা আকর্ষণীয় করা হয়েছে, অথবা একেবারে কিছুই নেই এমন সব জায়গাকে সাজিয়ে নিয়ে পর্যটককে আকৃষ্ট করা হয়েছে |
ত্রিপুরায় সমুদ্র পাশে না থাকলেও নানা ধরনের বিষয় আছে, যা এই ক্ষেত্রে বিশেষ কার্যকর ভূমিকা রাখার মতো | যার একটা হচ্ছে পাহাড়| যেগুলোকে অল্প আয়াসেই নানা রূপে ও সুযোগে পরিবর্তিত করা যায়| সাজিয়ে গুছিয়ে নানা পরিকাঠামো তৈরি করে নিয়ে একটা আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গড়ে তোলা যায় |
কিন্তু সেটা বাস্তবে করা হয়নি | যেমন কিছুই করা হয়নি ত্রিপুরার ইতোমধ্যেই উল্লেখযোগ্য হয়ে উঠা বেশকিছু ঝর্না নিয়ে| যেগুলোকে ঘিরে অসাধারণ সব পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা সম্ভব হত| একটু পরিকল্পনা করে এগুলোকে ঠিকঠাক রেখেই আরও কিছু মনোরম দৃশ্যপট ও কাঠামো সংযুক্ত করলেই যথেষ্ট| সঙ্গে পর্যটনের আনুষঙ্গিক বিষয় যেমন যোগাযোগ, ছোট লজ ইত্যাদি কিছুরও দরকার আছে| বাইরে থেকে পর্যটকরা ত্রিপুরায় এসে শুধু কয়্য়েকটা ধর্মীয় ও প্রাচীন প্রস্তরের ভাস্কর্য ছাড়া কিছুই সহজে দেখতে পান না |
বাইরের পর্যটকদের কথা ছেড়ে দিলেও রাজ্যের মানুষরাও এখানে এগুলোর সুযোগ পান না | সামান্য কিছু ক্ষেত্রে যুবকরা অনেক কষ্ট করে নিজেরা দল বেঁধে গিয়ে ওইসব ঝর্নার সৌন্দর্যে কয়েক ঘণ্টা গা ভাসিয়ে আসেন | বর্তমান পরিকাঠামোয় সেখানে সবার যাওয়া সম্ভব নয় | যার মধ্যে একটি হচ্ছে, সানাইলাল পাড়ার কাছের ঝর্না | যেখানে অনেক কষ্ট করে যারা একবার গিয়ে আসে, তারাই এসে একে ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে না ওঠায় আফসোস করে|
আসলে ত্রিপুরার মানুষের সার্বিক বিনোদনের ক্ষেত্রেই বলতে গেলে প্রায় কিছুই নেই| পর্যটনের দিক দিয়ে হাতে গোনা কয়েকটা রাজ আমলের স্থাপত্য, আর প্রাচীন ভাস্কর্য | উইকএন্ড বলে কোনো কালচার এখানে এখনও গড়ে উঠে নি | যাদের অঢেল পয়সা আছে, তারা ঘনঘন কলকাতা চলে যান | যা বেশিরভাগ মানুষের পক্ষেই সম্ভব নয়| এখানে মানুষের কাছে তাই উইকএন্ড বলে আলাদা কিছুই নেই| বেশিরভাগ কর্মচারীর কাছে উইকএন্ড হচ্ছে বাড়িতে বসে ঝিমুনো| ব্যবসায়ীরা তাই রবিবারেও দোকান খোলা রাখার সিদ্ধান্তে আনন্দিত হয়েছেন| তা সে, দোকানে সেদিন বিক্রি না থাকলেও ভালো| কারণ তার এছাড়া আর কিছুই করার নেই |
অথচ উইক এন্ডে স্বল্প দূরত্বের আউটিং-এর অনেক সুযোগ করে দেওয়া সম্ভব ত্রিপুরায় | উইক এন্ড ছাড়াও মানুষ সেখানে যাবেন| যেতে বাধ্য হবেন| কারণ এ রাজ্য থেকে চট করেই যেখানে সেখানে যাওয়া যায় না| এখন ট্রেন এসেছে, কিন্তু তারপরেও পাহাড়ি রাস্তা পেরিয়ে অন্য কোথাও যেতে এখান থেকে অনেক সময় লাগে |
তাই রাজ্যের মধ্যেই যদি এসব গড়ে তোলা যায়, তাহলে মানুষের বিনোদনের পাশাপাশি নানা পেশার মানুষের একটা ভালো রোজগারেরও সুযোগ হবে | যা নিয়ে অনেকবার অনেকে বলেছেন, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি | যে কারণে রাজ্যের মানুষই এইসব সৌন্দর্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন | নতুন করে যেসব কিছু গড়ে তোলা যায়, সেগুলো ছেড়ে দিলেও, এখনই যা কিছু আছে, সেসব পর্যটন ক্ষেত্রেরও সব জায়গায় সহসা যাওয়া যায় না | অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয় | তাই একটু পরিকল্পনার অভাবে উপেক্ষিতই ত্রিপুরার পর্যটন |
