ইস্টার্ন টাইমস ,নতুন দিল্লি ৩ অক্টবর : দেশজুড়ে বিক্ষোভের ব্যাপকতা কমাতে হাথরাসের ঘটনায় বড়সড় পদক্ষেপ করলো উত্তরপ্রদেশের আদিত্যনাথ সরকার। গণধর্ষণ ও নির্মম অত্যাচারে দলিত তরুণীর মৃত্যুর ঘটনায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিলেন যোগী আদিত্যনাথ । উল্লেখ্য , গতকালই টুইটারে যোগী আদিত্যনাথ লিখেছিলেন, উত্তরপ্রদেশের মা-বোনেদের সম্মান নষ্ট যারা করবে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে।
পাশাপাশি এদিন আর একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে। গত বৃহস্পতিবার হাথরাস যেতে বাধা পেয়েছিলেন রাহুল গান্ধী ,প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্রা ।শুক্রবার যেতে দেওয়া হয়নি তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদদের।
কিন্তু, ৪৮ ঘণ্টা পর ছবিটা বদলাল। শেষ পর্যন্ত হাথরাসে গিয়ে রাহুল গান্ধী ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্রা সহ আরও তিন জন কংগ্রেস নেতা গণঘর্ষিতা তরুণীর বাড়ি গিয়ে পরিবারের সঙ্গে দেখা করলেন ।এদিন সকালে টুইট করে হাথরাসে যাওয়ার কথা জানান কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী। প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি বলেছিলেন, ‘বিশ্বের কোনও শক্তি নেই যে আমায় নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করা থেকে রুখবে।।’ তবে, এ দিন সকালেই উত্তরপ্রদেশে দলের সভাপতি অজয় কুমার কে গৃহবন্দি করা হয়েছে। প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতির হাথরাস যাওয়ার খবর রটতেই দিল্লি-নয়দা সীমানায় প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়। প্রিয়াঙ্কা সুর চড়িয়ে বলেন, ‘এবার না পারলে আবার চেষ্টা করব।’
বৃহস্পতিবার রাহুল-প্রিয়াঙ্কার হাথরাস যাওয়াকে কেন্দ্র করে হুলুস্থুল বেঁধে গিয়েছিলো । হাথরাসের নির্যাতিতা, মৃত তরুণীর বাড়ির লোকের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার মাঝপথে পথে আটকে দেওয়া হয়েছিল তাঁদের। পুলিশের সঙ্গে তীব্র বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা ।
এমনকী রাহুলকে রাস্তায় ঠেলে ফেলা দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ।এদিকে, এদিনই উত্তরপ্রদেশ পুলিশের ডিজি হাথরাসের নির্যাতিতা মৃতা তরুণীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন।শুক্রবার হাথরাসের গণধর্ষিতার গ্রামে প্রবেশ ঠেকাতে মরিয়া ছিল যোগীর পুলিশ। নাছোড় সংবাদ মাধ্যমও। এই পরিস্থিতিতে পুলিশ ও সাংবাদিকদের মধ্যে যেন লুকোচুরি খেলা চলছিল।
তবে, শনিবার বেলা গড়াতেই অবস্থার বদল ঘটে। সংবাদ মাধ্যমকে নির্য়াতিতা মৃতার গ্রামে ঢুকতে অনুমতি দিতে বাধ্য হয় পুলিশ প্রশাসন। এই ঘটনার তদন্তে গঠিত সিটের সদস্যরা গ্রাম ছাড়তেই সংবাদ মাধ্যমকে সেখানে যেতে ছাড় দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।হাথরাসকাণ্ডে প্রবল চাপে উত্তরপ্রদেশের যোগী সরকার।শুধু কংগ্রেসই নয়, সমাজবাদী পার্টি ও শুক্রবার তৃণমূল প্রতিনিধি দল হাথরাসে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাঁদেরও পুলিশি বাধার সম্মুখীন হতে হয়। পুলিশ তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েনকেও ঠেলে ফেলে দিয়েছে বলে অভিযোগ।হাথরাসের ঘটনায় মুখ পুড়েছে যোগী সরকারের।
প্রতিনিয়ত ধেয়ে আসছে সমালোচনার ঝড়। দলিত তরুণীর গণধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় সরকার যাই পদক্ষেপ করুক না কেন তা প্রতিবাদের আগুনে জল ঢালতে ব্যর্থ। সংবাদ মাধ্যম থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি- নির্যাতিতা মৃতার পরিবারের অভিযোগ শুনতে গ্রামে ঢুকতে মরিয়া। আর তাতেই আগুনে ঘৃতাহুতির ভয় পাচ্ছে উত্তরপ্রদেশ সরকার। কার্যত দিশাহারা যোগী প্রশাসন। তাই গণধর্ষিতার গ্রামকে প্রায় ‘দুর্গে’ পরিণত করে ফেলেছে যোগীর পুলিশ। তিনশ পুলিশ কর্মী, সতেরো পুলিশ ভ্যান ও গ্রামে প্রবেশের মুখে পরতে পরতে পাঁচটি ব্যারিকেডে হাথরাস যেন ‘বদ্ধভূমি’।কিন্তু এতেও শেষ রক্ষা হয়নি গণধর্ষিতার পরিবারের কথা মাঝে মধ্যেই ভিডিও আকারে সামনে এসে যাচ্ছে। যা মিনিটে ভাইরাল। তাই যোগী প্রশাসনের কড়া নজরে এখন মৃতা তরুণীর পরিবার। সংবাদ মাধ্যমকে মৃতার পরিবারের তরফে বলা হয়েছিল, গত দু’দিন ধরে পুলিশ তাঁদের কার্যত গৃহবন্দি করেছে। তাঁদের ফোনেও নজরদারি চলছে।হাথরাসজুড়ে এখন খাঁকি উর্দির দাপাদাপি। যোগীর নির্দেশে পুলিশ ‘রাজধর্ম’ পালনে ব্যস্ত। অন্যদিকে ,হাথরাসে গণধর্ষিতা তরুণীর মৃত্যু নিয়ে শনিবার বিকালে ধুন্ধুমার বাধে আগ্রায়। বাল্মীকি সম্প্রদায়ের মানুষজন পথে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। মোবাইলে তোলা ভিডিওতে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ছেন।
পুলিশ লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে ।পুলিশ সুপার বি আর প্রমোদ বলেন, “পরিস্থিতির ওপরে নজর রাখা হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় কেউ বিতর্কিত পোস্ট করছে কিনা, সেদিকে নজর রাখছে আমাদের সাইবার সেল।
আমি জনসাধারণের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, শান্তি রক্ষা করুন।” বাল্মীকি সম্প্রদায়ের মানুষ জানিয়ে দিয়েছেন, হাথরাসের ঘটনার প্রতিবাদে তাঁরা শহরে সাফাইয়ের কাজ করবেন না। একটি ছবিতে দেখা গিয়েছে, শহরের ব্যস্ত রাস্তার ধারে পড়ে রয়েছে জঞ্জালের স্তূপ।
