
ইস্টার্ন টাইমস , নয়াদিল্লি: ‘সাধারণ ক্ষেত্রে আত্মহত্যায় যে প্ররোচনা দেয় তাকে আটক করে পুলিশ। আমার ক্ষেত্রে অমিত শাহ এবং নরেন্দ্র মোদিকে আটক করা উচিত।’ এই মন্তব্য পাঞ্জাবের প্রবীণ কৃষক নিরঞ্জন সিং-এর।সোমবার বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করতে চেষ্টা করেছিলেন সিংঘু সীমান্তে আন্দোলনরত ওই কৃষক।কিন্তু সঙ্গীসাথিদের তৎপরতায় এবং চিকিৎসকদের সাহায্যে বিপদমুক্ত হয়েছেন তিনি।
সুস্থ্য হয়েই তাঁর আত্মহত্যার প্রচেষ্টায় দায়ী হিসেবে কাঠগড়ায় তুলেছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে। কৃষকদের ক্ষোভ বিক্ষোভের এই আবহে নতুন করে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে সরকার। কবে ফের বৈঠক হবে, সেজন্য দিন নির্ধারণ করতে আহ্বান জানানো হয়েছে কৃষক সংগঠনগুলিকে ।
কিন্তু সরকারের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত ফের আলোচনার টেবিলে কৃষক নেতারা বসেন কিনা, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে মঙ্গলবার বৈঠকে বসছেন কৃষক নেতারা।
কিন্তু বৈঠকে বসার আগে আন্দোলনকারী কৃষক সংগঠনগুলির নেতারা নতুন আলোচনা প্রস্তাব নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন তাতে সরকারের পক্ষে ইতিবাচক হতে পারে এমন কিছু নেই। বরং বলা যেতে পারে সরকার ও কৃষকদের নতুন আলোচনার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রকের থেকে আলোচনায় বসার আমন্ত্রণপত্র পেয়েছেন ক্রান্তিকারি কিষান ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট ডঃ দর্শন পাল।
এই চিঠির প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন , সরকার একেবারেই আন্তরিক নয়। আমরা সরকারকে ইতিমধ্যেই জানিয়েছি যে, সংশোধনী আমরা মানব না।পুরোপুরি বাতিল করতে হবে তিনটি কৃষি আইন। জমহুরি কিষান সভার সাধারণ সম্পাদক কুলওয়ান্ত সিং সাঁধু মনে করেন আবার আলোচনায় বসার সরকারি প্রস্তাব ,শুধুমাত্র সময় নষ্ট করার কৌশল।
তিনি বলেছেন, “আগের বৈঠকে কী হয়েছে, তার বিবরণ জানানো হয়েছে ৫ পাতার চিঠিতে।সবটাই টাইম পাসের কৌশল”।রাষ্ট্রীয় কিষান মজদুর মহাসংঘের জাতীয় সভাপতি শিব কুমার কাক্কা বলেন, “চিঠিতেই স্পষ্ট যে সরকার বৈঠক ডাকতে চায় না। এটা কেবল একটা ফর্মালিটি। পরবর্তী পর্যায়ের বৈঠক নিয়ে সরকার সিরিয়াস নয়।
তা না হলে, বৈঠকের স্থান, সময় ঠিক করা থাকত”।প্রসঙ্গত, কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে অনড় কৃষকরা। দিল্লি সীমানায় কৃষকদের বিক্ষোভ অব্য়াহত।
কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে ভারত বনধ পালন করেন কৃষকরা। সেইসঙ্গে ৩৫ টি কৃষক ইউনিয়নের প্রধানরা অনশনে বসেন। একাধিকবার সরকারের সঙ্গে কৃষকরা আলোচনার টেবিলে বসলেও জট কাটেনি।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমর সহ শাসক দলের ছোট ,বড় সব নেতাই ভাঙা রেকর্ড বাজানোর মত ক্রমাগত বলে চলেছেন কৃষিক্ষেত্রে পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে কৃষকদের আয় দ্বিগুন করা হবে। কৃষকদের জীবন জীবিকার মান উন্নয়নে কেন্দ্রীয় সরকার বদ্ধপরিকর। বাস্তবটা কি ?পাঞ্জাবের সরাইয়ে এক একর জমিতে কপি চাষ করেছিলেন অজিত সিং।
খরচ হয়েছিল ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। ভেবেছিলেন অন্তত এক লক্ষ টাকা লাভ হবে।
অথচ সেই কপি এখন কেজি প্রতি ৭৫ পয়সায় বিক্রি হচ্ছে। এসবে দেখে আর নিজেকে সামলাতে পারেননি অজিত সিং।
ক্ষেতসুদ্ধ ফুলকপি নষ্ট করেছেন।অজিত একা নন। পাঞ্জাবের আরও বহু কৃষক এভাবেই নিজেদের ক্ষেতের কপি নষ্ট করছেন। কারণ মাণ্ডিতে দাম মিলছে না। মাথায় হাত চাষীদের। তাঁরা চান, শুধু ধান, গম নয়, তার সঙ্গে অন্য সবজি, ফসলেরও ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (এম এস পি ) ধার্য করুক সরকার। এই লড়াইটাই দিল্লি সীমান্তে চালাচ্ছেন কৃষকরা।
অজিত সিং জানিয়েছেন , গত বছর এক কেজি কপির দাম ছিল ১১ থেকে ১৪ টাকা। এ বছর তা এক টাকারও কম। পাইকারি বাজারে ফসলের দাম পড়ে গেছে। অগত্যা তাই সবজি নষ্ট করছেন কৃষকরা।শুধু পাঞ্জাব নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে একই অবস্থা। বিহারের সমস্তিপুরের মুক্তপুর গ্রামের বাসিন্দা ওম প্রকাশ যাদব। তিনি নিজের ফুলকপির ক্ষেতে ট্রাক্টর চালিয়েছেন।
সাড়ে তিন একর জমিতে সমস্ত কপি নষ্ট করেছেন। এখন দেড় একর জমির কপি রয়েছে। আগামী দিনে তাও নির্মূল করবেন। যাদবের গলায় আক্ষেপ, ‘দেশে কৃষকদের কী অবস্থান, বুঝে গেছি এতদিনে।’ কর্নাটকে এক কৃষক ১৫ টন টমেটো শুকনো কুয়োয় ফেলে নষ্ট করেছেন। বেলগাভিতে নিজের ফুলকপির ক্ষেতে গরু ছেড়ে দিয়েছেন আর এক কৃষক।
তাঁদের কথায়, ‘সরকার না দেখলে এ রকমই চলবে’। যদিও প্রধানমন্ত্রী থেকে কৃষিমন্ত্রী সহ সরকার বা সরকারি দলের নেতারা সকলেই মনে করেন কৃষকদের ক্ষোভ ,বিক্ষোভ সবটাই ‘টুকরে টুকরে গ্যাং ‘ , ‘মাওবাদী’ , অথবা ‘দেশবিরোধী’ শক্তির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত !
