
ইস্টার্ন টাইমস ,আগরতলা, ১৫ অক্টোবর: সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রীর হুমকির বক্তব্য প্রত্যাহার করার দাবিতে এবং সংবাদ মাধ্যমের কণ্ঠরোধ করার সরকারি অপপ্রয়াস ও সাংবাদিকদের উপর ক্রমবর্ধমান আক্রমণের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার আগরতলায় গণ-অবস্থান করলেন সাংবাদিকরা| এসেম্বলি অফ জার্নালিস্ট-এর ব্যানারে হলো এই দু’ঘণ্টার গন-অবস্থান|
এর আগে এসেম্বলি অফ জার্নালিস্ট-এর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রেস কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যানের কাছে চিঠিও দেওয়া হয়েছে| যেখানে মুখ্যমন্ত্রীর হুমকি এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে ঘটা সমস্ত ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে| সুস্থ গণতন্ত্রের স্বার্থে বিষয়টিতে তাঁদের হস্তক্ষেপের আবেদন জানানো হয়েছে| সাংবাদিকদের এই দাবিগুলো এক মাস পেরিয়ে গেলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া নেই |
উল্লেখ্য, গত ১১ সেপ্টেম্বর মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেছেন, রাজ্য সরকার কোভিড পরিস্থিতি মোকাবিলার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়েছে| সবকিছু ঠিকঠাক আছে, কিন্তু একাংশ সংবাদ মাধ্যম অতি উত্সাহী হয়ে উল্টাপাল্টা লিখে চলেছে| মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব এদেরকে ছাড়বেন না, ইতিহাস সাক্ষী, এদেরকে মানুষ ক্ষমা করবেন না |
এই ধরনের অভূতপূর্ব এবং সরাসরি হুমকি দেওয়ার পর থেকে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় সাংবাদিকদের উপর আক্রমণ শুরু হয়| বিভিন্ন ঘটনায় এখন পর্যন্ত সাতজন সাংবাদিক নিগ্রহ হয়েছেন| সাংবাদিকদের সংগঠন ‘এসেম্বলি অফ জার্নালিস্ট’-এর পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁর বক্তব্য প্রত্যাহার করে নেওয়ার দাবি জানিয়ে এক সপ্তাহের সময় দেওয়া হয়েছিল|
কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী এই দাবি উপেক্ষা করায় ১৯ সেপ্টেম্বর সাংবাদিকরা রাজ্যপালের দ্বারস্থ হন| রাজ্যপাল রমেশ বৈশ বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে আশ্বস্ত করলেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি|
পরে রাজ্যপালকে বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্যও চিঠি দেওয়া হয়েছে| কিন্তু সেই চিঠিরও কোনো জবাব আসেনি| এই অবস্থায় এসেম্বলি অফ জার্নালিস্ট গান্ধী-জয়ন্তীতে কালো ব্যাজ পরে আগরতলা প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিবাদ কর্মসূচিও করেছে |
প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতে লেখা হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার করে নেওয়ার এই আন্দোলনে অংশ নেওয়া সংবাদ মাধ্যমগুলোর বিজ্ঞাপন কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে| গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে সংবাদ মাধ্যম কোভিড পরিস্থিতিতে চিকিত্সা ব্যবস্থা নিয়ে শুধুমাত্র বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছিল, কোনো ধরনের আতংক তৈরি করেনি|
জনগণের স্বার্থেই এইসব প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছিল| তার পরেও একটা অদ্ভুত পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে| আজ পর্যন্ত ত্রিপুরার কোনো মুখ্যমন্ত্রী এমনভাবে সরকারি মঞ্চ ব্যবহার করে হুমকি দেন নি| ত্রিপুরায় এখন সংবাদ মাধ্যম এক কালো অধ্যায়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে| দুর্বল প্রশাসন সংবাদ মাধ্যমকে যেন শত্রু বলে মনে করছে| এমনকি সত্তরের জরুরি অবস্থার সময়েও সংবাদ মাধ্যম এই ধরনের পরিস্থিতির শিকার হয়নি|
সংবাদ মাধ্যম সরকারের মুখপত্র নয়, সমাজ ও জনগণের স্বার্থে বিভিন্ন চিন্তা ও চেতনার প্রকাশ করা সংবাদ মাধ্যমের মৌলিক অধিকার| তাই ‘এসেম্বলি অফ জার্নালিস্ট’ আশা করেছিল আলোচনার মাধ্যমে এই পরিস্থিতির সমাধান হবে| কিন্তু তা হয়নি| তাই বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করে সুস্থ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আবেদন জানানো হয় |
কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই চিঠিরও কোনো জবাব আসেনি| এই অবস্থায় আন্দলন তীব্র করে তোলার লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার সাংবাদিকরা দু’ ঘণ্টার গণ অবস্থান করেছে| এসেম্বলি অফ জার্নালিস্ট-এর চেয়ারম্যান সুবল কুমার দে বলেছেন, সাংবাদিকদের উপর যে একের পর এক আক্রমণ চলছে, তার পরেও পুলিশ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না|
মুখ্যমন্ত্রীও একেবারেই নীরব ভূমিকা পালন করে চলেছেন| তাই মুখ্যমন্ত্রী যতক্ষণ পর্যন্ত তার বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইবেন না, ততক্ষণ পর্যন্ত এই আন্দোলন চলতে থাকবে| সংগঠনের পক্ষ থেকে দেশের ও বিদেশের বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার কাছেও বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে বলে জানান সুবলকুমার দে|
অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার সাংবাদিকদের স্বাধীনতার সম্পর্কে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ| লক ডাউনের সময়েও সরকার পত্রিকা পাঠানোর জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করে দিয়েছে |
