
ইস্টার্ন টাইমস বিশেষ সংবাদদাতা, নয়াদিল্লি ও ঢাকা, ৫ জানুয়ারি: অক্সফোর্ড ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা’র টিকা বাংলাদেশে রপ্তানিতে কোন বাঁধা নেই বলে জানিয়েছে সেরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া। সোমবার দিনজুড়ে বাংলাদেশে টিকা প্রাপ্তি নিয়ে যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছিল তা দূর করতে সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইনডিয়ার প্রধান নির্বাহী আদর পূনাওয়ালা বলেছেন, ভারত থেকে সব দেশেই ভ্যাকসিন রপ্তানির অনুমোদন আছে।
এক সাক্ষাৎকারে তার বক্তব্য নিয়ে দু’দিন ধরে বিভ্রান্তি চলার পর মঙ্গলবার টুইট করে এ কথা জানালেন সেরাম ইনস্টিটিউটের প্রধান। টুইটে তিনি লিখেছেন, যেহেতু সাধারণের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে, তাই তিনি বিষয়টি স্পষ্ট করতে চান।
কোভিশিল্ড নামের ওই টিকার তিন কোটি ডোজ কিনতে গত ৫ নভেম্বর সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর সোমবার এই টিকা আমদানি ও জরুরি ব্যবহারের অনুমোদনও দিয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশে সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত ভ্যাকসিনের ‘এক্সক্লুসিভ ডিস্ট্রিবিউটর’ বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থা কোভিশিল্ড ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়ার এক মাসের মধ্যে ৫০ লাখ ডোজ টিকার প্রথম চালান পাঠানোর কথা সেরাম ইনস্টিটিউটের।
ভারত গত রোববার সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত টিকা ব্যবহারের চূড়ান্ত অনুমোদন দিলে বাংলাদেশেও তা দ্রুত পাওয়ার আশা তৈরি হয়।
কিন্তু সেরাম ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী আদর পূনাওয়ালার বরাত দিয়ে রোববার রাতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, রপ্তানি শুরুর আগে আগামী দুই মাস তারা ভারতের স্থানীয় চাহিদা পূরণ করতেই জোর দেবে। ওই খবরে বাংলাদেশের টিকা পাওয়া বিলম্বিত হতে পারে বলে শঙ্কা তৈরি হয়।
এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান, বিদেশমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এবং বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান সোমবার দফায় দফায় সংবাদ সম্মেলন করে সবাইকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বেক্সিমকো, ফরেন মিনিস্ট্রি ও ভারতের মিশনের সাথে আলোচনা হয়েছে। তারা আশ্বস্ত করেছেন, আমাদের সাথে যে চুক্তি হয়েছে সেই চুক্তি ব্যাহত হবে না।
কোনো সমস্যা হবে না, আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।’
এমন পরিস্থিতিতে সোমবার ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেন, আমরা ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের প্রধানের বক্তব্য দেখেছি। প্রতিবেশী বাংলাদেশের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনও কারণ নেই, কারণ ভারত বরাবরই তার প্রতিবেশীদের অগ্রাধিকার দিয়ে আসছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না।
বাংলাদেশের এই উদ্বিগ্নের বিষয়ে মঙ্গলবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, বাংলাদেশকে ভ্যাকসিন দেবার প্রতিশ্রুতি ভারতের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে, ব্যত্যয়ের সুযোগ নেই। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের একটি সূত্রের বরাত দিয়ে ইকনমিক টাইমস এ খবর দেয়।
টিকা নিয়ে দুই দেশের এসব মন্তব্যকে বলা হচ্ছে ‘ভ্যাকসিন ডিপ্লোম্যাসি’। কূটনৈতিক সূত্র মঙ্গলবার এ বিষয়টি নিয়ে জানিয়েছে, ‘ভ্যাকসিন ডিপ্লোম্যাসি’তে শেখ হাসিনা এগিয়ে, চিনা জুজু’র কারণে বাংলাদেশে সিরামের টিকা রপ্তানিতে বাধা হবে না ভারত।
অপ আরেকটি সূত্র জানায়, সিরামের সঙ্গে বাংলাদেশের বেক্সিমকোর সঙ্গে চুক্তির আগে চিনের সিনোভ্যাক বায়োটেকের টিকার বিষয়ে ইতিবাচক ছিল হাসিনা সরকার।
কিন্তু দিল্লির ‘অনুরোধে’ ওই টিকার ট্রায়ালের অনুমতি দেয়নি বাংলাদেশ। সোমবার সিরামের টিকা প্রাপ্তি নিয়ে অনিশ্চিয়তার খবরের পর চিনা কোম্পানি আনুই জিফেইয়ের টিকা ট্রায়ালের প্রস্তাব দেয়।
আনুন জিফেইয়ের টিকার নাম আরভিডি-ডিমার। গত ২রা সেপ্টেম্বর চিনের আনুই জিফেই তাদের উদ্ভাবিত টিকা পরীক্ষার বিষয়ে বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে (বিএসএমএমইউ) আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেয়। বর্তমানে এ প্রস্তাবটি যাচাই- বাছাইয়ের পর্যায়ে রয়েছে বলে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মুহিবুর রহমান বলেন, চিনের একটি প্রতিষ্ঠান বিএসএমএমইউ’র সঙ্গে কাজ করছে। এটি সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে বিবেচনায় রয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্রটি জানায়, সেরামের টিকা নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হলে শেখ হাসিনা চিনের টিকাকে অনুমোদন দেবেন। আর ভারত চিনের সঙ্গে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠতা চায় না। এ কারণে বাংলাদেশের টিকা প্রাপ্তি নিয়ে কোন সমস্যা হবে না।
