
বিনীতা দত্ত
এয়ার ইন্ডিয়ার চারজন মহিলা পাইলট একটি ৭৭৭ বোয়িং বিমানকে আমেরিকার সান ফ্রান্সসিসকো বিমানবন্দর থেকে উত্তর মেরুর উপর দিয়ে ব্যাঙ্গেলোর বিমানবন্দরে উড়িয়ে নিয়ে এসেছেন। তাঁরা হলেন – ক্যাপ্টেন জোয়া আগরওয়াল, ক্যাপ্টেন থানমাই পাপাগড়ি, ক্যাপটেন আকাঙ্খা সোনাওয়ানে এবং ক্যাপটেন শিবানী মানহাস।
এটি পৃথিবীর দীর্ঘতম একটি বাণিজ্যিক যাত্রী বিমান-পথ যা উত্তর মেরুর আকাশ পার হয়ে আসতে হয়। এটি বিমান চালনার ইতিহাসে একটি বিশেষ ঘটনার সূচনা করলো।
কারণ শুধুমাত্র মহিলা-পাইলটদের দ্বারা কখনো এই পথে বিমান চালানো হয় নি। শুধু তাই নয়, এটি কোথাও না থেমে টানা ১৭ ঘন্টা বিমান চালিয়ে তাঁরা এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছেন। এই আকাশপথের দূরত্ব প্রায় ১৬০০০ কি.মি.এবং যাত্রাপথটি পরস্পর ১৮০ ডিগ্রি বিপরীতে রয়েছে। সময়ের পার্থক্য ১৩.৫ ঘন্টা।এই বিমানটি ৭৭৭-২০০ এল আর এয়ারক্র্যাফট ভি টি এ এল জি এবং এখানে ২৮৩ জন যাত্রীর
বসার ব্যবস্থা আছে। ৮ টি ফার্স্ট ক্লাস, ৩৫ টি বিজনেস ক্লাস ও ১৯৫ টি ইকনমি ক্লাস আছে। এ ছাড়া বিমানটিতে ৪টি ককপিট, ১২ জন কেবিন-ক্রু আছেন। এই উড়ানের মধ্য দিয়ে এই রুটে প্রথম নন্-স্টপ সার্ভিস চালু হতে চলেছে, যার উদ্বোধন করেছেন এই মহিলারা।
এয়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষ মূল দায়িত্ব দিয়েছিলেন ক্যাপ্টেন জোয়া আগরওয়ালকে। তাঁর ৮০০০ ঘন্টা বিমান চালনার অভিজ্ঞতা আছে। বিমান-বিশেষজ্ঞদের মতে, উত্তর মেরুর উপর দিয়ে বিমান চালনা অত্যন্ত কঠিন।
এর জন্য যথেষ্ট দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা প্রয়োজন। এই নারী পাইলটদের তা আছে বলেই এই কাজের দায়িত্ব তাদের দেওয়া হয়েছে। পুরুষ পাইলটরা অবশ্য আগে এ পথে বিমান চালিয়েছেন।
এ ওয়ান ১৭৬ বিমানটি সানফ্রান্সিসকোর স্থানীয় সময় রাত ৮-৩০-এ ছেড়েছিল।
ক্যাপ্টেন জোয়া বলেছেন – বেশির ভাগ মানুষই উত্তর মেরুকে দেখতে পান না জীবনকালে। আমাকে এই পথে বিমান চালনার জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে বলে আমি নিজেকে সৌভাগ্যবতী বলে মনে করছি এবং এই দায়িত্ব আমাকে অর্পণ করার জন্য আমি অভিভূত। উত্তর মেরুর উপর দিয়ে পৃথিবীর দীর্ঘতম পথে বিমান চালনা করার সুবর্ণ সুযোগ বিমান মন্ত্রক আমাকে দেওয়ার জন্য আমি তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ। আমার টীমের অন্যান্য পাইলটদের জন্য আমি গর্বিত।
যে কোনো পেশাদার পাইলটের কাছে এই পথে বিমান চালানো অবশ্যই একটি স্বপ্ন।জোয়া আরো বলেন যে,এই পথে আসার জন্য ১০ টন জ্বালানী বাঁচানো সম্ভব হয়েছে।
এয়ার ইন্ডিয়া কতৃপক্ষ এক টুইটারে ক্যাপ্টেন জোয়া,ক্যাপটেন পাপাগড়ি,ক্যাপটেন আকাঙ্খা এবংক্যাপটেন শিবানীকে তাঁদের এই কাজটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন।এই ঐতিহাসিক মূহূর্তের অংশ হওয়ার জন্য তাঁরা বিমানের যাত্রীদেরও অভিনন্দন জানিয়েছেন।
বিভিন্ন মিডিয়া যখন মহিলাদলের দীর্ঘতম,বিরামবিহীন বিমান চালানো নিয়ে সরগরম,তখনই মালগাড়ি চালিয়ে নিয়ে গেলেন ভারতীয় রেলের এক মহিলা টীম ।
এরা হলেন,-লোকো পাইলট কুমকুম এস ডোংরে(৩৪),সহকারী লোকো পাইলট উদিতা ভার্মা(২৮)এবং গার্ড আকাঙ্খা রয়(২৮)।এক টুইটারে ভারতীয় রেলের পশ্চিম ডিভিশন এ কথা জানিয়েছে।ঐ শাখায় শুধুমাত্র মহিলা টীমের দ্বারা, এতো ওয়াগনসহ ট্রেন চালানোর ঘটনা এই প্রথম।২০২১এর ৫ই জানুয়ারী এই ট্রেনটি চালানো হয়।
তাঁরা মহারাষ্ট্রের ভাসাই রোড স্টেশন থেকে গুজরাটের ভাদোদরায়(বরোদায়)মালবাহী ট্রেনটিকে চালিয়ে নিয়ে যান।এই ট্রেনটিতে ৪৩টি ওয়াগনে ৩৬৮৬ টন পণ্য ছিল।ভাসাই রোড থেকে ট্রেনটি দুপুর ১১.৩০ এ ছাড়ে।৬ ঘন্টা পর মালবাহী ট্রেনটি গন্তব্যে পৌঁছায়।ট্রেনটির গতি ছিল প্রতি ঘন্টায় গড়ে ৬০ কিলোমিটার।
গন্তব্যে পৌঁছানোর পর ভারতীয় রেলের পশ্চিম ডিভিশনের পক্ষ থেকে মহিলা টীমের সদস্যদের পুষ্পস্তবক দিয়ে অভিনন্দন জানানো হয়।
