অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়
সারা বছর তিল ধরানোর জায়গা থাকতো না । কলকাতা ময়দানে আসা দর্শক -সমর্থকদের খিদে মেটাতো বাটার টোস্ট , ঘুগনি, ভেজিটেবল এবং চিকেন স্টু, ফিশফ্রাই, ভেজিটেবল চপ, ডিমের ডেভিল, ফিশ চপ, চা কফি বা মহা মেডান মাঠের পিয়াজি, চিনে বাদাম আরও কত কী ৷ উনানের আঁচ নিভতো না। সঙ্গে দেখা যেত, বিহার থেকে আসা বহু পুরনো চা বিক্রেতা বা শাঁখালু , ছোলা বিক্রেতারা, এ মাঠ থেকে ও মাঠ পৌঁছে যাচ্ছেন।
গত ২১ মার্চের আগে ময়দানে এটাই ছিল পরিচিত দৃশ্য। এখন গেলে সব শুনসান, তারা নেই। আস্তে আস্তে খেলা ধুলো চালু হচ্ছে বটে কলকাতা ময়দানে। কিন্ত মাঠে দর্শক ঢোকার অনুমতি নেই। যাও দুই একজন ময়দানে ঘুরতে যাচ্ছে, তারা দশ ভাগের এক ভাগ কি না সন্দেহ !
মোহন বাগান, জর্জ, সি এ বি’র মত বড় ক্যান্টিন বাদ দিলে অর্ধেকের থেকে বেশি কলকাতা ময়দানের ক্যান্টিনের ব্যবসা বন্ধ। ময়দানের ক্যান্টিন কর্মীরা লকডাউনের সংকটে ত্রাণ পাচ্ছিলেন বিভিন্ন সংস্থার থেকে , এখন তো সেটাও বন্ধ।
মোহনবাগান, সিটি ক্লাব এবং রাজ্য কবাডি তাঁবুর ক্যান্টিন চালান পলাশ মুখোপাধ্যায়। ময়দানে পলাশকে সবাই চেনে কাজুদা নামে।
তিনি জানান,’আমার প্রত্যেক ক্যান্টিনে দিনে ২০ হাজার টাকার বেশি খাবার বিক্রি হতো আর কলকাতা লিগ বা আই পি এল থাকলে আরও বেশি। এখন ২০০ টাকার জিনিস বিক্রি হতে ঘাম বেরিয়ে যাচ্ছে । অর্ধেক কর্মীদের দেশে পাঠিয়ে দিয়েছি।
যা পারছি সাহায্য করছি, কিন্তু এভাবে কতদিন ।যারা বাদাম, চা বেচতো তারা রাস্তায় নেমেছে ময়দান ছেড়ে জিনিস বিক্রি করতে। ওরা আর ফিরে আসবে কি না সন্দেহ !
অনেক ক্যান্টিন কর্মীও শুনছি পেশা বদল করেছে।’
ময়দানে আই লিগ হবে। ইডেনে হচ্ছে টি টোয়েন্টি লিগ। তার পরেই রঞ্জি হওয়ার কথা। পলাশ বাবুর কথায়,’তাতে লাভ কি হবে ! সব জিনিস খুলছে ।কিছু মানুষকেতো নিয়ম মেনে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হোক।
ট্রাফিক পুলিশ, অফিস কর্মী ময়দানের আসে পাশে থাকা লোক জন এসে খাচ্ছে কিন্তু এভাবে কত দিন চলবে ।কত লোক এখানে নানা জীবিকার সাথে যুক্ত তাঁদের কথা তো ভাবা উচিত।’ ময়দানের খেলা শুরু হলেও তারা বিপন্ন যারা এতদিন কলকাতা ময়দানে আসা দর্শক দের নানা স্বাদের খাবারে তৃষ্ণা, খিদে মিটিয়েছে। কবে ভ্যাকসিন বেরোবে সেটা কেউ জানে না। আর ততদিনই বোধহয় অন্ধকারে ডুবে থাকবে কলকাতা ময়দানের ক্যান্টিন কর্মীদের জীবন।
- বিশেষ অজ্ঞের কোভিদ জিজ্ঞাসা পর্ব-১ >>
- বিশেষ অজ্ঞের কোভিদ জিজ্ঞাসা পর্ব-২ >>
- বিশেষ অজ্ঞের কোভিদ জিজ্ঞাসা পর্ব-৩ >>
