
coronavirus in tripura
অপূর্ব দে ,আগরতলা, ২ অক্টোবর: প্রশাসনের উপেক্ষায় ত্রিপুরায় করোনা আক্রান্ত মানুষরা নিজেরাই ওষুধ কিনে খাওয়া শুরু করে দিয়েছেন| বেশিরভাগ রোগীই এখন আর চিকিৎসকের দ্বারস্থ হচ্ছেন না| রোগ ছড়ানো ঠেকানোর যথেষ্ট সুযোগ থাকা সত্বেও সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে কেউ ভয়ে কোনো প্রতিবাদও দেখা যাচ্ছে না|
ত্রিপুরায় করোনা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়ে চলেছে| যার বেশিরভাগই এখন সরকারের নথিতে আসছে না| দেখা যাচ্ছে, গ্রামে-গঞ্জেও এখন প্রচুর রোগী আছেন| প্রায় প্রতি বাড়িতেই কেউ না কেউ জ্বরে আক্রান্ত| আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই জ্বর করোনার লক্ষণযুক্ত|
কিন্তু করোনা রোগীদের জন্য যেসব সেন্টার করা হয়েছে, সেগুলোর পরিকাঠামো ও পরিষেবা খুবই নিম্নমানের| রোগীরা তাই সেখানে যেতে সাহস পান না| অপেক্ষাকৃত সুস্থ মানুষও এই সেন্টারগুলোতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন, এমন অভিযোগও রয়েছে| তাই যাদের ক্ষেত্রে শারীরিক সমস্যা আশংকাজনক নয়, তারা তো এখন করোনার পরীক্ষা পর্যন্ত করতে সাহস পান না| পরীক্ষা করালে কোভিড সেন্টারে যেতে হবে, এই ভয়ে একটা বড় অংশের জ্বরাক্রান্ত মানুষ এখন ওষুধের দোকান থেকে জ্বর আর করোনা সংক্রমণের জন্য কোনো একটা ওষুধ কিনে নিয়ে নিজেরাই খেয়ে নিচ্ছেন|
সব ফার্মেসিতে এখন প্রতিদিন এরকম রোগীর সংখ্যা প্রচুর| তারা করোনা আক্রান্ত কিনা, সেটা নিজেরাও জানেন না| আবার সত্যি সত্যি স্বাদ-গন্ধ পাচ্ছেন না, এমন জ্বরাক্রান্ত রোগীও ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে নিয়ে খেয়ে বাড়িতে বিশ্রাম করছেন| সপ্তাহ খানেক পরে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন| এমন ঘটনা প্রচুর| অবস্থা বেগতিক না হলে ডাক্তারের দ্বারস্থ তারা হচ্ছেন না|
তাই সরকারের নথি অনুযায়ী করোনা রোগাক্রান্ত মানুষের চেয়ে ত্রিপুরায় বাস্তব সংখ্যাটা অনেক অনেক বেশি| অথচ ত্রিপুরায় এই রোগ ছড়িয়ে পড়া ঠেকানো অনেক সহজ ছিল| কেননা ত্রিপুরায় তিনদিকে বাংলাদেশ| শুধুমাত্র বিমানে অথবা চুরাইবাড়ি দিয়েই আসা যায়| তাই বাইরে থেকে মানুষদের সঠিকভাবে পরীক্ষা করলে, এভাবে দ্রুত ছড়াত না| অথচ বাইরে থেকে আসা মানুষদের সবার পরীক্ষা করা হয়নি| প্রতি পাঁচজনে একজনের পরীক্ষা করা হয়েছে| আর যাদের পরীক্ষা করা হয়নি, তাদের মাধ্যমেই রাজ্য জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা|
ত্রিপুরায় তাই অনেক দেরিতে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়লেও জনসংখ্যার অনুপাতে এখন দ্রুত হারে ছড়াচ্ছে| ইতোমধ্যে ২৮৩ জন মারা গেছেন| আর সরকারের পক্ষ থেকে সবকিছু ঠিকঠাক আছে বলে প্রচার চলছে| প্রথম দিকে কিছু প্রতিবাদও দেখা গিয়েছিল, সরকারের ভুমিকা নিয়ে| কিন্তু যখন প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে সরকার নানা রকম পদক্ষেপ নিতে শুরু করে, তারপর থেকে এখন আর এনিয়ে কেউ কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না| করোনা নিয়ে সংবাদ করায় প্রচার মাধ্যমকে পর্যন্ত নানা ভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে| মুখ্যমন্ত্রীও সাংবাদিকদের দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন|
এই অবস্থায় করোনা সংক্রমণ ঠেকানো বা চিকিৎসা নিয়ে ত্রিপুরা সরকার এখন আক্ষরিক অর্থেই সম্পূর্ণ ব্যর্থ বলেই মনে করছে তথ্যভিজ্ঞ মহল| কিন্তু পরিস্থিতি যে কোথায় গিয়ে ঠেকবে, তা নিয়েই শুরু হয়েছে দুশ্চিন্তা|
