
ইস্টার্ন টাইমস , কলকাতা: হাজার হাজার পুণ্যার্থী বছরভর মকর সংক্রান্তিতে গঙ্গাসাগরে পুণ্যস্নানের জন্য মুখিয়ে থাকেন। কিন্তু আর পাঁচটা বছরের থেকে এ বছর সম্পূর্ণ বিষয়টা আলাদা। করোনা আবহে এবছর মকর সংক্রান্তি। গতকালকেই কলকাতা হাইকোর্ট গঙ্গাসাগর মেলার অনুমতি দিয়েছে। তাই নিউ নর্মালে মকর সংক্রান্তিতে গঙ্গাসাগরে পুণ্যার্থীদের ভিড় কম। প্রশাসনের তরফেও নিরাপত্তা ও নজরদারি বন্দোবস্ত করা হয়েছে।
জনস্বার্থ মামলার সূত্র ধরে নানা টালবাহানার পর বুধবারই গঙ্গাসাগর মেলায় শর্তসাপেক্ষে অনুমতি দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। কোভিড পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে ই-স্নানের উপরেই মূলত জোর দিতে বলা হয়েছে। যে সমস্ত পুণ্যার্থী গঙ্গাসাগরে উপস্থিত থেকে ই-স্নান করবেন তাঁদের বিনামূল্যে কিট প্রদানের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। তবে যাঁরাই স্নানের কিট বাড়ি বসে সংগ্রহ করতে চান, তাঁদের কাছ থেকে শুধুমাত্র পরিবহণের খরচটুকুই নেওয়ার নির্দেশ আদালতের। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে পুণ্যস্নান।
চলতি বছর তুলনামূলক ভিন রাজ্য থেকে আসা পুণ্যার্থীদের সংখ্যা অনেকটা কম। বাংলার বাসিন্দাদের অনেকেই সংক্রমণের আশঙ্কায় গঙ্গাসাগর থেকে মুখ ফিরিয়েছেন। তবে যাঁরা গঙ্গাসাগরে স্নান করতে এসেছেন তাঁদের উপর নজরদারি চালাতে উপকূলরক্ষী বাহিনী, নৌবাহিনী এবং জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী প্রস্তুত।
সাগরজুড়ে চলছে কড়া নজরদারি। মেলা প্রাঙ্গনে মেগা কন্ট্রোল রুম তৈরি হয়েছে। বাবুঘাট থেকে সাগর পর্যন্ত ১১০০টি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। এবার গঙ্গাসাগর অনেকটাই ফাঁকা।
প্রসঙ্গত, মহামারীর আবহে গঙ্গাসাগর মেলায় ভিড় নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে, জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন অজয় দে নামে জনৈক এক ব্যক্তি। সাগর মেলা প্রাঙ্গণ ও বাবুঘাটে মেলার মাঠকে কন্টেনমেন্ট জোন হিসেবে চিহ্নিত করার আর্জি জানানো হয়। এরপর করোনা আবহে মেলার আয়োজনে, সরকার কী ধরনের সাবধানতা অবলম্বন করছে, তা জানতে চেয়ে রাজ্য সরকারের কাছে হলফনামা চেয়ে পাঠায় কলকাতা হাইকোর্ট।
বুধবার শুনানি চলাকালীন রাজ্যের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত বলেন, এবার অনেক কম সংখ্যক মানুষ মেলায় অংশগ্রহণ করছেন। গতবারের তুলনায় মাত্র দশ শতাংশ মানুষ এবার এসেছেন। সাগরের জল বদ্ধ নয়, বহমান। সেক্ষেত্রে করোনা ছড়ানোর আশঙ্কা অনেক কম বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
শেষ অবধি হাইকোর্ট শর্তস্বাপেক্ষে গঙ্গাসাগর মেলা ও স্নানে ছাড়পত্র দিলেও, প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ ই-স্নানে সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছেন।
বেঞ্চের নির্দেশ, সাগর সঙ্গমে স্নানে অনুমতি দেওয়া হলেও, রাজ্য সরকার ই-স্নান পরিষেবায় বাড়তি গুরুত্ব দিক। যাঁরা গঙ্গাসাগর মেলার মাঠ থেকে ই-স্নানের কিট সংগ্রহ করবেন, তাঁদের যেন তা বিনামূল্যে দেওয়া হয়। যাঁরা বাড়িতে বসে ই-স্নানের কিট পেতে চাইবেন, তাংদের কাছ থেকে যেন শুধু ডেলিভারি চার্জটুকু নেওয়া হয়, সেই ব্যবস্থা করুক রাজ্য সরকার।
ঠান্ডা আর ভিড়, গঙ্গাসাগরে এবারে দুটোই কম। প্রশাসন সূত্রে দাবি, বুধবার সন্ধে পর্যন্ত ৮ লক্ষর কাছাকাছি পুণ্যার্থী সাগরসঙ্গমে এসেছেন। মহামারীর দাপটে উধাও চিরপরিচিত জনপ্লাবন।
