
মঙ্গলবার ১২ ঘন্টা উঃবঙ্গ বনধের ডাক
ইস্টার্ন টাইমস , নয়াদিল্লি : সোমবার বিজেপির উত্তরকন্যা অভিযান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠলো শিলিগুড়ি। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আমফান ও করোনা দুর্নীতি, বেকারত্বের হার, চা শ্রমিকদের দুরবস্থা-সহ একাধিক অভিযোগ তুলে উত্তরকন্যা অভিযানের ডাক দেয় বিজেপির যুব মোর্চা। উত্তরকন্যা অভিযানে গিয়ে মৃত্যু হয় এক বিজেপির কর্মীর।
বছর পঞ্চাশের ওই ব্যক্তির নাম উলেন রায়। পুলিশের ছোড়া কাদানে গ্যাসের সেলের আঘাতে মৃত্যু বলে দাবি বিজেপির। প্রতিবাদে মঙ্গলবার ১২ ঘন্টার উত্তরবঙ্গ বনধের ডাক দিয়েছে পদ্ম বাহিনী।
এদিন তিনবাতি মোড়ে ব্যারিকেড ভেঙে এগোতে থাকে যুবমোর্চার সদস্যরা। পুলিশের ঘোষণা অমান্য করেই এগোতে থাকা শান্তিপূর্ণ মিছিল। কোনরকম প্ররোচনায় ছাড়াই পুলিশের তরফে শুরু হয়ে যায় কাঁদানে গ্যাস, জলকামান।কৈলাস বিজয়বর্গীয় নেতৃত্বে একটি মিছিল আসছিল জলপাই মোড় থেকে। আর একটি মিছিল দিলীপ ঘোষের নেতৃত্বে ফুলবাড়ি থেকে আসছিল ।
সেই মিছিলটিও ফ্লাইওভার পেরতেই পুলিশের বাধার সম্মুখীন হয় । ব্যারিকেড ভেঙে এগোনোর চেষ্টা করতেই পুলিশের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কিতে জড়িয়ে পড়েন বিজেপির কর্মীরা।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ময়দানে নামে বিশাল পুলিশ বাহিনী।
পুলিশ-বিজেপি কর্মী ধস্তাধস্তিতে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয় এলাকায়। তিনবাত্তি মোড়ের কাছে রাস্তায় বসে পড়েন যুব মোর্চার কর্মীরা।
পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে পুলিশের তরফে ঘোষণা করা হয়, ওই এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি হয়েছে। জমায়েতকে ছত্রভঙ্গ হওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়। কিন্তু তাতে কর্ণপাত করেনি বিজেপির যুব মোর্চা।
এরপরই বিক্ষোভকারীদের হটাতে প্রথমে টিয়ার গ্যাস ছোঁড়ে পুলিশ। পাল্টা ইট বৃষ্টি করে বিজেপির কর্মীরা। জলকামান ব্যবহার করেও বিক্ষোভকারীদের হটানোর চেষ্টা করে পুলিশ। পুলিশ-বিজেপি সংঘর্ষে জখম হন বেশ কয়েকজন বিজেপি কর্মী। এরপর ফের নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এলাকা। ময়দানে নামে মহিলা মোর্চার কর্মীরা। খুলে দেন ব্যারিকেডের দড়ি।
সেই সময় ফের জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ। ফাটানো হয় টিয়ার গ্যাসের সেল। জলের মুখে পিছু হটে বিজেপি কর্মীরা।
এই পরিস্থিতিতে রণক্ষেত্র তিনবাত্তি মোড়ে পৌঁছয় বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মিছিল। যদিও তাঁদের প্রতিহত করতে প্রস্তুত ছিল পুলিশ।
এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলে পুলিশ-বিজেপির এই লড়াই। ব্যারিকেডের সামনে আগুনও ধরিয়ে দেওয়া হয়।
এদিনের এই কাঁদানে গ্যাসে কৈলাস বিজয়বর্গীয় অসুস্থ হয়ে পড়েন। এর মধ্যে খবর আসে পুলিশের লাঠিচার্জে একজনের মৃত্যু হয়েছে।আহত অবস্থায় উলেন রায় নামের ওই বিজেপি কর্মীকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানেই মৃত্যু হয় বলে জানা গিয়েছে।
পরে হাসপাতালে পৌঁছান রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ, সায়ন্তন বসু। রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ দাবি করেন মৃত উলেন রায়-এর শরীরে একাধিক পাখি মারার বন্দুকের গুলির দাগ।
দিলীপ ঘোষ দাবি করেন পুলিশের ভিড়ে মিশে ছিল তৃণমূলের গুন্ডা বাহিনী। তারাই পাখি মারার বন্দুক ব্যবহার করেছেন। এমনকি কলকাতার মতো শিলিগুড়িতেও বাড়ির ছাদ থেকে তৃণমূলের গুন্ডারা ছোড়েন দেশি বোমা। এই ঘটনার প্রতিবাদে আগামীকাল উত্তরবঙ্গ বনধের ডাক দিয়েছে রাজ্য বিজেপি।
অন্যদিকে রাজ্য পুলিশের এক টুইটার বার্তায় বলা হয়েছে ‘আজ শিলিগুড়িতে, একটি রাজনৈতিক দলের সমর্থকরা তাদের প্রতিবাদ কর্মসূচির সময় মারাত্মক হিংসাত্মক কার্যকলাপ করেছেন।
তারা অগ্নিসংযোগ, ইট-বৃষ্টি, গুলি চালানো এবং সরকারী সম্পত্তি ভাঙচুর করছেন। পুলিশ সংযম দেখিয়েছে এবং লাঠিচার্জ বা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেনি। উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে কেবল জল কামান এবং কাঁদানে গ্যাস ব্যবহৃত করা হয়েছে। একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হচ্ছে। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ ময়নাতদন্তের পরেই জানা যাবে।‘
