
বিশ্বজিৎ দত্ত, ঢাকা, ১২ জানুয়ারি: ত্রিপুরার পালাটানা থেকে বিদ্যুৎ আমদানি নিয়ে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ বিভাগের আধিকারিকদের মধ্যে মতের পার্থক্য দেখা দিয়েছে। এমনকি পালাটানা থেকে বিদ্যুৎ নিতে প্রতিবেশি দেশের আগ্রহ নেই।
বাংলাদেশের বিদ্যুৎ বিভাগে এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ত্রিপুরা থেকে বিদ্যুৎ আনার আর প্রয়োজন নাই। কারণ বাংলাদেশই এখন তার চাহিদার সম্পূর্ণটা উৎপাদন করতে পারে। তাছাড়া কুমিল্লার গ্যাস ব্যবহার করে সেখানে একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। যাতে ত্রিপুরা থেকে বিদ্যুৎ আনার জন্য যে সঞ্চালন লাইন করা হয়েছিল তা আমরা ব্যবহার করতে পারবো।
তিনি আরও বলেন, যদি ত্রিপুরা থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করতেই হয় তবে ত্রিপুরা সরকারের আমদানির উপর থেকে ভ্যাট, টেক্স ও আমদানি শুল্ক মওকুফ করতে হবে।
এ বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ বেশ কয়েকবার তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। কিন্তু কোন সমাধান হয়নি।
প্রসঙ্গত, আগামী মার্চে ত্রিপুরার সঙ্গে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ আমদানি চুক্তি শেষ হয়ে যাচ্ছে। ২০১৬ সালের মার্চ মাসে ত্রিপুরা থেকে বিদ্যুৎ আমদানির ৫ বছরের চুক্তি করে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ডিজিটাল কনফারেন্সের মাধ্যমে বিদ্যুৎ আমদানির উদ্বোধন করেন।
সম্প্রতি ত্রিপুরার মূখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রীরাজকুমার সিংয়ের সঙ্গে দেখা করে বাংলাদেশের সঙ্গে ত্রিপুরার বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তিটি নবায়নের জন্য অনরোধ করেছেন।
মন্ত্রী তাকে আশ^স্ত করেছেন তিনি এ বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলবেন। মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব মন্ত্রীকে বাংলাদেশের দাবির বিষয়েও কথা বলেছেন।
ত্রিপুরার গোমতী জেলার ৭২৬ মেগাওয়াট গ্যাসভিত্তিক পালটানা বিদ্যু কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশ ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করে। আমদানি করা এই বিদ্যুতের দাম পড়ে বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৬ টাকা। ত্রিপুরা ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশের কাছে বিক্রয় করে গত বছর প্রায় ৪৫ কোটি রূপি আয় করেছে।
বিদ্যুৎআমদানির বিষয়ে বাংলাদেশের বিদ্যুৎপ্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেছেন, ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করে বাংলাদেশের লাভ হয়েছে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা।
তিনি বলেন, ১০০ মেগাওয়াট একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করতে ১০০০ একর জমি নষ্ট হয়। বিনিয়োগ করতে হয় ২ বিলিয়ন ডলার। আর বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি করতে সময় লাগে ৫ বছর। তা ছাড়া আমদানি করা বিদ্যুতের দামও কম পরে। এই হিসাবে আমদানি করা বিদ্যুই ভাল।
উল্লেখ্য, ত্রিপুরার পালটানায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রের যন্ত্রপাতি পরিবহনে বাংলাদেশ ট্রানজিট দিয়েছিল। বাংলাদেশের আশুগঞ্জ দিয়ে পালটানা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভারী যন্ত্রপাতি বিনাশুল্কে নিয়ে যাওয়া হয়।
ভারত এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি অবিশ্বাস্য মাত্র দেড় বছরে নির্মান কাজ সমাপ্ত করে উৎপাদনে গিয়েছিল। পালটানা থেকে আখাউড়া সীমান্ত পর্যন্ত বিদ্যুৎ পরিবহণে সঞ্চালন লাইন তৈরী করেছে ভারত। আর আখাওড়া থেকে জাতীয় গ্রীড পর্যন্ত বিদ্যুৎ লাইন তৈরী করেছে বাংলাদেশ।
