
বিশ্বজিৎ দত্ত, ঢাকা, ১৩ জানুয়ারি: ভারতে বিনা শুল্কে পণ্য রফতানি ও স্বল্পশুল্কে পণ্যের কাঁচামাল আমদানির সুবিধা আরো ৫ বছর পাবে বাংলাদেশ। স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকায় আরো ২ বছর অর্থাৎ ২০২৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থাকতে পারায় এই সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
বর্তমানে স্বল্পোন্নত দেশ হিসাবে বাংলাদেশ ভারত, চিন ও উন্নতদেশগুলোতে বিনাশুল্কে পণ্য রফতানি করতে পারে। আবার এই সুবিধায় ভারত থেকে পণ্যের কাঁচামাল ৫ শতাংশ শুল্কে আমদানি করতে পারে।
স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে ২০২৪ সালে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে প্রবেশ করবে এটি ১ বছর আগেও নির্ধারিত ছিল।
কারণ যে ৩টি সূচকের মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশে উত্তোরণ হয় তার ৩টি সূচকই বাংলাদেশ পূরণ করেছিল। এর একটি ছিল, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, মানব সম্পদের উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক ভংগুরতা। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বর্তমানে ২ হাজার ডলার।
এলডিসি থেকে উত্তোরণের জন্য মাথা পিছু আয় দরকার ১ হাজার ২৩০ ডলার। মানব সম্পদ উন্নয়নে ৬৬ পয়েন্ট দরকার কিন্তু বাংলাদেশের রয়েছে ৭২.৮ পয়েণ্টে। বর্তমানে কোন ধরণের অর্থনৈতিক ভংগুরতা বাংলাদেশের নেই।
গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ সরকারের নীতি নির্ধারক ও জাতীসংঘের কমিটি ফর ডেভেলাপমেন্টের(সিডিপি) মধ্যে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশের উত্তোরণের বিষয়ে একটি সভা হয়।
সেখানে করোনার কারণে সারা বিশ্বের পরিস্থিতি ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থায় তার প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে আলোচনার পর বাংলাদেশ সিডিপির কাছে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তোরণে আরো ২ বছর সময় চায়। সিডিপি বাংলাদেশের এই প্রস্তাবকে সমর্থন করে।
সভায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সমন্বয়ক জুয়েনা আজিজ জাতি সংঘের সিডিপির সভাপতি হোসে আন্তেনিও ওকাম্পোসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত সিডিপির ত্রিবার্ষিক সভার আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের এলডিসি থেকে উত্তোরণের সময় ২০২৬ করার সুপারিশ উপস্থাপন করা হবে।
বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড.শামসুল আলম এ বিষয়ে জানিয়েছেন, শুধু বাংলাদেশ নয় নেপাল ও মিয়ানমারও আরো ২ বছর সময় বৃদ্ধির জন্য আবেদন করছে।
তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে আমরা উন্নয়নশীল দেশ হলেও বাণিজ্য সুবিধাগুলো চালু রাখতে পারবো। কিন্তু ২ বছর স্বল্পোন্নত দেশে থাকার কারণে আমরা এমনিতেই ভারত থেকে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবো।
বাংলাদেশের আরো ২ বছর স্বল্পোন্নত দেশে থাকার বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করেছেন বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদরা ।
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাত পুরো বিষয়টিকেই একটি ধাপ্পাবাজি বলেছেন।
তিনি মনে করেন, বাংলাদেশের মানুষের প্রকৃত মাথাপিছু আয় বাড়েনি। তার মতে যেখানে আয় বৈষম্য পালমা রেটিং ৩এর চেয়ে বেশি সেখানে কিছু লোকের আয় বেড়েছে। তা দিয়ে প্রকৃত আয় নিরুপন হয়না। সুতরাং এলডিসি থেকে বের হওয়ার প্রধান যে শর্ত মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি তা সঠিক নয়। মানুষের প্রকৃত সমস্যাকে আড়াল করতে এসব স্বল্পোন্নত, উন্নত তত্ত্ব হাজির করেছে রাজনীতিবিদ ও আমলারা।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার পর পলিসি রিসার্চের অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, কোভিডের কারণে আমাদের অর্থনীতির গতী কমেছে কিন্তু এলডিসি থেকে উত্তোরনের শর্তের কোন ব্যাঘাত হয়নি। মনে হয় সরকার চায়নি এখনি এলডিসি থেকে বের হয়ে যাই। তাই জাতিসংঘের সিডিপির সঙ্গে আলোাচনা করেই তারা ২ বছর উত্তোরণের সময় বাড়িয়েছে।
বাংলাদেশ আগেই ৬ বছরের জন্য বাণিজ্য সুবিধাগুলো চেয়েছিল। এই সুবিধাগুলো হলো ইউরোপীয় ইউনিয়নে শুল্কমুক্ত কোটা, ফার্মাসিউটিক্যাল খাতে সুবিধা, তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে নানা সুবিধা।
এখন ২ বছর বাড়িয়ে সময় বাড়িয়ে ও পরের ৩ বছর যে সুবিধা অব্যাহত থাকবে। তবে ব্যাক্তিগতভাবে আমি দু:খ পেয়েছি। কারণ বাংলাদেশের মতো এমন অর্থনীতির কোন দেশ আর গরীবের তালিকায় নেই। আমরা গরীব না হয়েও আরো ২ বছর গরীব থেকে যাবো। এটা সত্যিই মানহানিকর।
গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চের সম্মানিত ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ সিডিপিকে অনুরোধ করেছে ২ বছর সময় বৃদ্ধির জন্য।
যেমন নেপাল ২০১৫ সালে সিডিপিকে অনুরোধ করেছিল তাদের উত্তোরণের সময় ২০১৮ সাল পর্যন্ত পিছিয়ে দেয়ার। সিডিপি হয়তো বাংলাদেশের সঙ্গে আরো যেসব ১১টি দেশ রয়েছে সবার সময়ই হয়তো বাড়িয়ে দেবে। সিডিপি তাদের রেটিংগুলো ৩ বছর অন্তর রিভিউ করে। সেখানে বাংলাদেশের রিভিউ হয়েছে ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের অর্থনীতির। তখন কোভিড ছিল না।
কিন্তু কোভিডের কারণে অর্থনীতির ভংগুরতা রয়েছে বলে সিডিপি মনে করছে। তাই তারা বাংলাদেশের অনুরোধে ২ বছর সময় বৃদ্ধিতে সম্মতি দিয়েছে।
