পার্থপ্রতিম মৈত্র
পর্ব-৩: লকডাউন?
এ এক অভূতপূর্ব সংকট। প্রায় সাড়ে সাত মাস বাদে লোকাল ট্রেন চালু হয়ে গেল। ২৪শে মার্চ ২০২০ মোদী প্রথম লকডাউন ঘোষণা করেন, সেদিন পর্যন্ত ভারতে কোভিদ পজিটিভের সংখ্যা ছিল ৪৩৪ জন মৃত ৯ জন। সারা পৃথিবীতে মোট আক্রান্ত ছিল ৩৭২৭৫৫, মৃতের সংখ্যা ১৬২৩১ জন।
তালিকার শীর্ষে ছিল চিন। আক্রান্ত ছিল ৮৭৭৪৭, মৃতের সংখ্যা ৩২৮৩ জন। বলা হলো চিন থেকে ছড়িয়েছে এই মারণ রোগ। উহান ভাইরাস। আজ ১১ নভেম্বর ২০২০। আজ চিন তালিকায় ৫৯ নম্বরে। আজ চিনে নতুন আক্রান্ত ১৭ জন, মৃত একজনও নয়। পশ্চিমবঙ্গে আজ লোকাল ট্রেন চালু হয়ে গেল। অথচ ভারতে আক্রান্ত আর মৃতের সংখ্যায় ভারত এখন দ্বিতীয়, আমেরিকার ঠিক পরেই। দফায় দফায় লকডাউনে, তারপর ঘটা করে দফায় দফায় আনলকে লাভের লাভ যে কিছু হয় নি তা গরুও বোঝে। কিন্তু এতদিন বন্ধ রেখে এই মোক্ষম সময়ে সব খুলে দিচ্ছে, এরা কি পাগল না শেয়ানা?
মাঝখান থেকে সবই পরমকরুণময় ঈশ্বরের ইচ্ছা বলে দেশের অর্থনীতিটাকে ধ্বংস করে দিয়ে, ওয়ার্ক কালচার শেষ করে দিয়ে, পিএমকেয়ার আর ত্রাণের প্যাকেজের নামে হিসেব বহির্ভূত টাকার হরির লুট।
চিন যদি একমাসের মধ্যে নিজের দেশের কোভিদ সামলে সারা পৃথিবীতে টেস্ট কিট, পিপিই, এমনকি মাস্ক আর স্যানিটাইজারের ব্যবসা করে লাল হয়ে যেতে পারে, ভারত তা পারে নি কেন? আজও ভারত কোভিদ বিষয়ে কেন চিনেরই কাস্টমার হয়েই রয়ে গেল? মেক ইন ইন্ডিয়া কোথায় গেল? কর্পোরেটের দালালবাহিনীর হাত ধরে এদেশে মন্বন্তর, দুর্ভিক্ষ আর জঙ্গলরাজ ফিরে আসছে। সেই ম্যানমেড প্যানডেমিকে কী করে বাঁচবেন তা আজ থেকে ভাবতে শুরু করুন।
সমাজের অভিজাতদের মধ্যে একটা দর্শন খুবই জনপ্রিয়। সব সংকটের মধ্যেই লাভের উপাদান থাকে। সংকট সমাধানের চাইতে সংকট জীইয়ে রেখে ব্যবহার করতে পারলেই লাভ। কোনও সংকটকে বৃথা যেতে দিও না।
ফয়দা তোলো। দীর্ঘদিন ধরে পৃথিবীতে এক তৃতীয়াংশ লোককে স্বেচ্ছা গৃহবন্দী থাকতে বাধ্য করা হয়েছে।
বেশ কয়েকটি দেশের সরকার সমস্ত অপ্রয়োজনীয় (!?!) ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়ায়, বিশ্ব অর্থনীতি চঞ্চল হয়ে পড়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসে আমরা কখনও এ জাতীয় ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী ব্যবস্থা দেখিনি যা প্রতিটি ব্যক্তিকে এত গভীর পর্যায়ে প্রভাবিত করে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে, কোটি কোটি মানুষের অবাধে ঘোরাফেরা করার এবং জীবিকা নির্বাহের এবং প্রতিবাদের সব ক্ষমতা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাবে।
আমাদের প্রিয় দেশ ভরতবর্ষ আতঙ্কে সিঁটিয়ে আছে। একটা গোটা দেশ তার একশো ত্রিশ কোটি অধিবাসী নিয়ে চলচ্ছক্তিহীন, স্তব্ধ।
একথা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে করোনা অর্থাৎ কোভিদ-১৯ এর প্রথম পর্যায়ে সৃষ্ট ফিয়ার সাইকোসিসে মোদি সরকার অনেক বেশি আধিপত্য নিয়ে অনেকটা এগিয়ে রয়েছে। বাকি সবাই পিছনে দৌড়াচ্ছে বটে, কিন্তু করোনা ভাইরাস এক ধাক্কায় মোদি সরকার কে অনেকটা এগিয়ে দিয়েছে। প্রমাণ বিহার ইলেকশান। আন্তর্জাতিক করোনা অর্থনীতির যারা সমর্থক তাদের মাথয় ধনপতিদের আশীর্বাদী হাত।
একবার মনে করে দেখুন অর্থনৈতিকভাবে বিধ্বস্ত ভারতীয় অর্থনীতি ধ্বসে যাওয়ার যে দায়ভার মোদি সরকারের ওপর চেপে বসেছিল ফাঁসের মতো, তা এখন অবহেলে পরবর্তী পর্যায়ে সরে গেছে এবং সে দায়ভার অন্তত এই মুহূর্তে কেউ কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর চাপানোর অবস্থানে নেই। শুধু তাই নয়, বিধ্বস্ত অর্থনীতি কে চাঙ্গা করার যে পদ্ধতিগুলি মোদির অনায়ত্ত ছিল, তা ক্রমশ তার মাথার করোনা অর্থাৎ মুকুট হিসেবে পরিগণিত হতে চলেছে। ভেবে দেখুন যে ভারতীয় অর্থনীতি কে (করোনা বিধ্বস্ত ভারতীয় অর্থনীতিকে) পুনরুজ্জীবিত করার যে ২০ লক্ষ কোটি টাকার প্যাকেজ কেন্দ্রীয় অর্থ দপ্তর ঘোষণা করেছে, তার সঙ্গে সারা বিশ্বের বিপুল আর্থিক অনুদান, প্রধানমন্ত্রী ত্রাণ তহবিল থাকা সত্বেও পিএম কেয়ার, এসবের হিসেব কে রাখবে, আর অডিট কে করবে?
করোনা ভাইরাসের ফলে বিশ্ব অর্থনৈতিক আউটপুট, ২০২০ সালে ৫.২% কমে যাবে বলে বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে। বিশ্বব্যাপী তার সর্বশেষ গ্লোবাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনার প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক বলেছে যে, ২০২০ সালে উন্নত অর্থনীতিগুলি ৭.০% সঙ্কুচিত হবে এবং উদীয়মান বাজারের অর্থনীতি ২.৫% সংকুচিত হবে। আর এই বছরের মধ্যে যদি আরও তিন মাসের জন্য লকডাউনগুলি বাড়ানো হয়, তবে ২০২০ এর সংকোচনটি আরও বেড়ে যাবে। ফলে আরও স্থায়ী ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে বিশ্ব বাণিজ্যের প্রবাহে ধ্বস নামবে, ছাঁটাই এবং পারিবারিক ব্যয়ের ক্ষেত্রে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হবে।
কোভিদ-১৯ আরও বহু লোককে আরও চরম দারিদ্র্যে ঠেলে দেবে। সংখ্যাটি পূর্বের হিসেব (৬ কোটি) থেকে বেড়ে ৭ কোটি বা ১০ কোটিতে দাঁড়াবে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানে ৬.১%, ইউরো অঞ্চলে ৯.১%, ব্রাজিলে ৮.০% এবং ভারতে ৩.২% সঙ্কোচন হচ্ছে। একমাত্র চীন প্রবৃদ্ধি বজায় রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
করোনো পূর্ববর্তী সময়ে এনআরসি / সিএএ নিয়ে সারা ভারতবর্ষে প্রবল বিক্ষোভ ইত্যাদি তে উলঙ্গ হয়ে গিয়েছিল ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার ভেক। মশালের মত জ্বলছিল শাহীনবাগ, পার্ক সার্কাস। ভারতের সবকটি প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির ছাত্র-ছাত্রীরা নেতৃত্ব দিচ্ছিল সংবিধান রক্ষার আন্দোলনে। প্রগতিশীল ধর্মনিরপেক্ষ হিন্দু এবং আতঙ্কিত মুসলিম জনগোষ্ঠী মোটামুটি কোণঠাসা করে ফেলেছিল জল্লাদ বাহিনীকে। তারা সবাই এই মুহূর্তে ব্যাকফুটে। লকডাউনে মানুষ বিশ্ববিচ্ছিন্ন, প্রতিবাদের কণ্ঠরুদ্ধ। ফলে রাষ্ট্রশক্তি আবাধে পাশ করিয়ে নিচ্ছে বিভিন্ন জনবিরোধী বিল।
তার মধ্যে সরকার পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে, কৃষক বিল পাশ হচ্ছে, এমনকি নিউ এডুকেশন পলিসিও।
বেসরকারীকরণ চলছে ভারতীয় রেলে, ব্যাংক মার্জার সম্পূর্ণ হচ্ছে, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বেচে দেওয়া হচ্ছে, বিচারের নামে প্রহসন চলছে, প্রতিবাদহীন। লক-আনলক পর্যায় চলছে চলছে এখন। মানুষ নিজেদের পরিবারের মৃত্যুর সম্ভাবনা দেখে আতঙ্কিত। কোভিদ-১৯, সরকারের রক্ষাকর্তা হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে করোনা নির্মূল হবার কোনও সম্ভাবনা নেই। ফলে, আরো বহুদিন কোভিদ-১৯ মোদীকে অক্সিজেন সাপ্লাই দিয়েই যাবে।
ভারতবর্ষে লকডাউন উঠে যাবে, আবার উঠবেও না। মিল খুলবে, কাজে যাবে, সর্বত্র জীবন যেমন চলছে তেমন চলবে, করোনাও থাকবে। মানুষে মানুষে এই ব্যবধান এই দূরত্ব থেকেই যাবে। সহজ প্রশ্ন উঠবেই যে তাহলে এই লকডাউন করে লাভ কী হলো। লাভ হলো এই যে ৮ অক্টোবর ২০২০ তারিখে বিশ্বব্যাংক বলেছে যে চলতি অর্থবছরে ভারতের জিডিপি তে ৯.৬% সংকোচন হবে বলে আশংকা করা হচ্ছে। জাতীয় লকডাউন এবং কোভিদ-১৯ অতিমারীর কারণে প্রতিটি পরিবার ও ব্যবসায়িক সংস্থাগুলির আয়ের উপর আঘাতের প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। কারখানা
বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, কর্মী ছাঁটাই চলছে, বেতন ছাঁটাই চলছে, এদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিষের দাম ইচ্ছেমতো বাড়িয়ে দিচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা, নিয়ন্ত্রণের জন্য কেউ নেই।
পরিবহনের ভাড়া দ্বিগুণ হয়ে গেছে, নিয়ন্ত্রণের জন্য কেউ নেই। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে আছে, হাসপাতালগুলি কোভিদ রুগী নিয়ে ব্যস্ত, অন্য কোনও রোগের চিকিৎসা বন্ধ, নিয়ন্ত্রণের জন্য কেউ নেই। দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ হ্যানস টিমার বলেন, “আমরা এর আগে যা দেখেছি, ভারতে পরিস্থিতি তার চেয়ে আরও খারাপ। করোনা অতিমারীর আগেই ভারতের অর্থনীতি পঙ্গু হয়ে গিয়েছিল। কোভিদ-১৯ এর ফলস্বরূপ, বিশ্বব্যাংক অনুমান করছে যে এক বছরে দারিদ্র্যসীমার নিচে বাসকারী মানুষের সংখ্যা ৩৩ শতাংশ বেড়েছে।
আগামীতে কোনো সামাজিক উৎসবে, কোন সাংস্কৃতিক উৎসবে, কোন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে, কোন বিদ্রোহে-বিক্ষোভে-বিপ্লবে, প্রতিটি মানুষ তার পাশের মানুষটিকে অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে দেখবে। তার সঙ্গে একটা মানসিক দূরত্ব মেন্টেন করবে, এটাই করোনা এপিসোডের অবদান। রাষ্ট্রের অবদান। রাষ্ট্র চায় নাগরিকদের নজরদারীর আওতায় নিয়ে আসতে। লকডাউন তাদের সে সুযোগ এনে দিয়েছে। ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন এবং নজিরবিহীন নজরদারি ইতিমধ্যে ভারতের রাজ্য পর্যায়েও ছড়িয়ে পড়েছে। কর্ণাটক রাজ্যের কোয়ারান্টাইন তালিকার প্রত্যেকের ব্যক্তিগত বিবরণ থেকে শুরু করে পুলিশ জিপিএস, ড্রোন এবং এমনকি জিওট্যাগেড সেলফিগুলির মাধ্যমে লোকজনকে পৃথকীকরণে ট্র্যাকিং করতে পারে আরোগ্য সেতু সমস্ত সরকারী, বেসরকারী এবং সামরিক কর্মীদের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
এটি সমস্ত স্মার্টফোনে প্রাক ইনস্টল হয়ে আসবে। চিনের অনুকরণে কোলকাতা মেট্রো রেলেও নাগরিকদের প্রতিদিন ফোনে টিকিট বুক করে একটি সরকারী জারি করা কিউআর কোড দেখানো বাধ্যতামূলক।
এবার সে পদ্ধতি এতোই পপুলার হয়েছে যে সারা দেশে তার প্রয়োগের কথা ভাবা হচ্ছে। অর্থাৎ নাগরিকের গতিবিধি নজরদারীর আওতায় চলে এলো। চিনে, ড্রোন মানুষকে তাদের মুখোশ পরতে বলে। মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনগুলিতে ডিজিটাল বারকোডগুলি ব্যক্তিদের স্বাস্থ্যের স্থিতি তুলে ধরে। সিঙ্গাপুরে, হংকং এ, সিওলে করোনা ভাইরাসের সম্ভাব্য বাহকেরা অন্য লোকের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ করেছে কিনা তা দেখার জন্য সেলফোনগুলির ব্লুটুথ ব্যবহার করা হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, স্মার্টফোনগুলির অবস্থান এবং চলাফেরার ডেটা করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় ব্যবহার করার সম্ভাবনা সম্পর্কে ফেসবুক, গুগল এবং অন্যান্য প্রযুক্তি সংস্থাগুলির সাথে কথা বলছে। দক্ষিণ ভারতের রাজ্য কেরালায়, কর্তৃপক্ষগুলি টেলিফোনে কল রেকর্ড, নজরদারি ক্যামেরার ফুটেজ এবং ফোন অবস্থানের ডেটা ব্যবহার করছে, যারা করোনা ভাইরাস রোগীদের সংস্পর্শে থাকতে পারে তাদের সন্ধান করতে। ধরে নেওয়া যাক সূদূর ভবিষ্যতে একদিন মানুষ কোভিদ-১৯ কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। সেদিন কি এই সার্ভিলেন্সের ব্যবস্থাগুলি তুলে দেবে রাষ্ট্র? মানুষকে আবার তার লুপ্তপ্রায় সামাজিকতা ফিরিয়ে দেবে? নাকি এই ফাঁকতালে রাষ্ট্র নাগরিকদের ওপর পূর্ণ নজরদারীর ব্যবস্থা স্থায়ীভাবে চালু করে দিল?
লকডাউন আসলে বিশ্বব্যাপী এক মানসিক ব্যাধি এবং সন্ত্রাস। রাস্তা বাজার জনশূণ্য, মানুষ একে অপরের সঙ্গে এক মিটার দূরত্বে মেনে চলছে অনুমতিপত্র হাতে, পরিবহন নেই, পুলিশ নাগরিকদের মারধর করছে, সব মুখ মুখোশের আড়ালে এবং তারা অসুস্থ নয়। এক চিলতে ঘরের পরিসরে বন্দী শিশু, কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরণী, প্রৌঢ়-প্রৌঢ়া, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। ভার্চুয়াল জগতে ডুবে থাকছে সবাই। মানসিক ব্যবধান, মানসিক ব্যাধি বেড়ে চলেছে। সকাল থেকে রাত্রি নিউক্লিয়ার ফ্যামিলির কয়েকটি মুখ দেখে দেখে মানুষ ক্লান্ত। বিধ্বস্ত। কোনও এনগেজমেন্ট ছাড়া এক ভয়ঙ্কর মানসিক রোগগ্রস্ত হয়ে পড়ছে মানুষ। যার বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা নেই, সঙ্গতি নেই, ভালবাসা নেই, প্রয়োজনীয়তা নেই, তার বেঁচে থাকার ইচ্ছেও মরে যায়। সারা পৃথিবীতে এর লক্ষণ প্রকট।
অথচ তারাই করোনার ভয়ে, মৃত্যুভয়ে ভীত। পরিবারগুলি পরিজনের মৃতদেহ দেখা থেকে বঞ্চিত। শেষকৃত্যেও নিষেধ। অশক্ত বৃদ্ধ বৃদ্ধা আতঙ্কগ্রস্ত।
ব্যাঙ্ক বন্ধ, কারখানা স্তব্ধ। সারা বিশ্ব যেন ম্যাজিক রিয়েলিজমের এক মৃতবিশ্ব। বলা হয় লকডাউন বৈজ্ঞানিক নয়, রাজনৈতিক। বিশ্ব-অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য কোটি কোটি ডলার আর্থিক সহায়তার ঘোষণা দিচ্ছে। সরকারের মাধ্যমে পাওয়া এই অর্থ কিন্তু অনুদান নয়, ঋণ। শেষ পর্যন্ত, সমস্ত অর্থনৈতিক সংকট সর্বদা অভিজাতদের পক্ষে হয়। ২০০৮ এর আর্থিক মন্দা প্রতিরোধের পন্থা ছিল দশ লক্ষ ট্রিলিয়ন ডলার মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের উপার্জন থেকে অভিজাতদের দিকে ফেলা। এই কোভিদ সংকটও সম্ভবত একই ফলাফল সহ শেষ হবে।
কিন্তু দেশগুলি এই পাগলামি, মূর্খতা এবং একনায়কতন্ত্র কেন মেনে নিল কেন, বিশেষত যারা নিজেদের গণতান্ত্রিক দেশ বলে থাকেন? আসলে “এটি একটি মনস্তত্ব যা ভাইরাসের চেয়ে বেশি বিপজ্জনক”।
নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিনের প্রাক্তন সম্পাদক বলেছেন: “চিকিৎসা পেশা ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থাগুলি কিনে নিয়েছে, কেবলমাত্র চিকিৎসার অনুশীলনের ক্ষেত্রেই নয়, শিক্ষা এবং গবেষণার ক্ষেত্রেও। বিখ্যাত আন্তর্জাতিক স্লোগান: “বাড়িতে থাকুন, জীবন বাঁচান” মিথ্যা ছিল। সত্য হলো, লকডাউন নিজেই কোটি কোটি মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে, দিচ্ছে।
- বিশেষ অজ্ঞের কোভিদ জিজ্ঞাসা পর্ব-১ >>
- বিশেষ অজ্ঞের কোভিদ জিজ্ঞাসা পর্ব-২ >>
- বিশেষ অজ্ঞের কোভিদ জিজ্ঞাসা পর্ব-৩ >>
- বিশেষ অজ্ঞের কোভিদ জিজ্ঞাসা পর্ব-৪ >>
- বিশেষ অজ্ঞের কোভিদ জিজ্ঞাসা র্ব-৫>>
- বিশেষ অজ্ঞের কোভিদ জিজ্ঞাসা পর্ব-৬ >>
- বিশেষ অজ্ঞের কোভিদ জিজ্ঞাসা পর্ব-৭ >>
