ইস্টার্ন টাইমস ,নয়াদিল্লি : সরকারের সমালোচনা কখনই দেশদ্রোহিতা হিসাবে চিহ্নিত হতে পারেনা।এই মন্তব্য করে উত্তরাখণ্ডের বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী টি এস রাওয়াতের বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিলেন উত্তরাখন্ড হাইকোর্টের বিচারপতি রবীন্দ্র মাইথনি।
নোটবন্দির সময় এক ব্যক্তির কাছ থেকে ঝাড়খণ্ডের তৎকালীন বিজেপি পর্যবেক্ষক টি এস রাওয়াত ঘুষ নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেছিলেন সাংবাদিক উমেশ কুমার শর্মা ।তারই দায়ের করা মামলার ভিত্তিতে টি এস রাওয়াতের বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিল উত্তরাখণ্ড হাইকোর্ট।
একই সঙ্গে অভিযোগকারী ওই সাংবাদিক ও তাঁর এক সহযোগীর বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলো প্রত্যাহারেরও নির্দেশ দিয়েছে উত্তরাখণ্ড হাইকোর্ট। ফেসবুকে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় রাজ্য সরকার দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল।
চলতি বছরের জুন মাসে উমেশ কুমার শর্মা ও তাঁর সহযোগী একটি ভিডিও প্রকাশ করেন। ওই ভিডিও-তে অভিযোগ করা হয়, ২০১৬সালে অমরাতেশ সিং চৌহান নামে এক ব্যক্তিকে ঝাড়খণ্ডের ‘গো সেবা আয়োগে’র প্রধান করে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে ২৫ লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়েছিলেন টি এস রাওয়াত ।
ওই অর্থ রাওয়াত আত্মীয়দের একাধিক অ্যাকাউন্টে হস্তান্তর করেছিলেন।যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য মুখ্যমন্ত্রীর বোন সবিতা রাওয়াত ও তার স্বামী ড. হরেন্দ্র সিং রাওয়াত।ওই ‘বেআইনি’লেনদেনের সময় টি এস রাওয়াত বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক হিসাবে ঝাড়খণ্ডের দায়িত্বে ছিলেন।
ওই ভিডিও প্রকাশ হবার পরেই সরগরম হয় উত্তরাখণ্ডের রাজনীতি। সাংবাদিক উমেশ কুমার শর্মা ও তাঁর সহযোগীর বিরুদ্ধে গত ৩১শে জুলাই এফআইআর দায়ের করে উত্তরাখন্ড পুলিশ।
ওই এফআইআর-এ ধোঁকা ,জালিয়াতি ,ষড়যন্ত্র সম্পর্কিত নানা ধারা যুক্ত করা হয়। যাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ও ত্রিবেন্দ্র বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি করে হাইকোর্টে আবেদন করেন উমেশ কুমার শর্মা।উল্লেখ্য ,২০১৮ সালে শর্মার বিরুদ্ধে ঝাড়খণ্ডের অমরাতেশ সিং চৌহান
একটি এফআইআর করে উত্তরাখন্ড সরকারকে বিপদে ফেলতে এবং ভাবমূর্তি নষ্ট করতে মিথ্যা বলার জন্য তাঁর ওপর চাপ সৃষ্টি করছে অভিযুক্ত।ওই এফআইআর-এ দেশদ্রোহিতার অভিযোগও আনা হয় উমেশ কুমার শর্মার বিরুদ্ধে। চলতি বছরে উত্তরাখন্ড পুলিশের এফআইআর-এ ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১২৪-এ ধারাও যুক্ত করা হয়েছিল। যে ধারায় ‘দেশদ্রোহিতার’ অভিযোগ আনা যায়।উত্তরাখন্ড হাইকোর্টে ওই এফআইআর চ্যালেঞ্জ করে এবং মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তদন্তের আবেদন জানান উমেশ কুমার শর্মা।
সেই মামলার প্রেক্ষিতেই উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী টি এস রাওয়াতের বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।আদালতে আবেদনকারীর পক্ষে সওয়াল করেন বিশিষ্ট আইনজীবী কপিল সিবাল ও শ্যাম দিবান।রাজ্য সরকারের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী পি এস পটওয়ালিয়া এবং ডেপুটি এডভোকেট জেনারেল রুচিরা গুপ্ত।
উত্তরাখণ্ড হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে দ্বারস্থ হচ্ছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রীর মিডিয়া কোর্ডিনেটর দর্শন সিং রাওয়াত বলেছেন, ‘হাইকোর্টের রায়কে আমরা সম্মান করি।
তবে, এবার আমরা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হব। প্রকৃত তদন্তেই সত্য প্রকাশ পাবে।’ এই ঘটনায় রীতিমত অস্বস্তিতে বিজেপি। দলের রাজ্যসভাপতি বংশীধর ভগৎ বলেছেন, ‘কী ঘটেছে আমি জানি না। আদালতের নির্দেশ মেনেই কাজ এগোবে।’
