
ইস্টার্ন টাইমস, আগরতলা , ২৬ জানুয়ারী : চাকুরীচ্যুত এক শিক্ষকের মরদেহ নিয়ে আগরতলায় শিক্ষাভবনের সামনে তুমুল বিক্ষোভ দেখাল ১০৩২৩ চাকুরীচ্যুত শিক্ষক – শিক্ষিকারা। আদালতের নির্দেশে চাকুরী খোয়ানো এই শিক্ষকরা ৳৪ জন সহকর্মীকে হারাল চাকুরীচ্যুত হওয়ার পর থেকে এই পর্যন্ত।
২০২০ সালের মার্চে চাকুরী হারান ত্রিপুরার এই অস্নাতক , স্নাতক ও বিভিন্ন বিষয়ের শিক্ষকরা। দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাসকারীদের জন্য ৩০ শতাংশ সংরক্ষণের সংস্হান রাখা নিয়োগ নীতিকে প্রথমে উচ্চ আদালত ও পরে শীর্ষ আদালত ভুল বলে রায় প্রদান করে পূর্বতন বাম সরকারের আমলে নিযুক্ত হওয়া এই বিরাট অংশের শিক্ষকদের চাকুরী বাতিল করে দেয়।
২০১৮ সালের বিধানসভা ভোটের আগে আদালতের রায়ে চাকুরী হারানো শিক্ষকদের নিয়োগ করার জন্য তের হাজার অ- শিক্ষক পদ তৈরি করেছিলো বাম সরকার। শীর্ষ আদালতে জনস্বার্থে মামলা করে আটকে দেওয়া হয়েছিলো সেই নিয়োগ প্রক্রিয়াও।
ভোটের আগে বিজেপি প্রয়োজনে দেশের সংবিধান সংশোধন করে হলেও শিক্ষকদের চাকুরীতে বহাল রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো। আগরতলার একটি বিলাসবহুল হোটেলে চাকুরীচ্যুত একাংশ শিক্ষক নেতাকে ডেকে সভা করে বিজেপিকে ক্ষমতায় আনার জন্য শিক্ষক নেতাদের সাহায্য চান।ক্ষমতায় বসে ভোটের আগে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বেমালুম অস্বীকার করছে বলে অভিযোগ তুলেছেন চাকুরীচ্যুত শিক্ষক শিক্ষিকারা।
২০২০ সালের মার্চে চাকুরী হারানোর ৯ মাস পর ৭ ডিসেম্বর থেকে আগরতলার প্যারাডাইস চৌমুহনীতে চাকুরীর সমস্যার স্হায়ী সমাধানের দাবিতে গন – অবস্থানে বসেন চাকুরীচ্যুত শিক্ষক – শিক্ষিকারা।
সোমবার অতিক্রান্ত হয়েছে অবস্হানের ৫০ দিন। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষকতা করা শিক্ষকরা কনকনে ঠান্ডার মধ্যে রাস্তায় বসে থাকলেও তাঁদের সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজন মনে করছে না সরকার। সোমবার সরকারকে আলোচনায় বসার চুড়ান্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলে ১০৩২৩ যৌথ সংগ্রাম কমিটির নেতৃত্ব।কোন প্রকার সাড়া মিলেনি সরকারের তরফে।
এর মধ্যেই রবিবার রাতে মারা যান অজিত সূত্রধর নামে চাকুরীচ্যুত এক স্নাতক শিক্ষক। সোমবার প্রয়াতের মরদেহ নিয়ে আসা হয় অবস্থান মঞ্চের সামনে।
সেখানে দীর্ঘসময় শায়িত রেখে মরদেহে ফুলমালায়, চোখের জলে শেষ বিদায় জানান সহকর্মীরা। অবস্থান মঞ্চের সামনে থেকে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় শিক্ষাভবনের সামনে।
চাকুরী ফিরে পাওয়ার দাবিতে দীর্ঘদিন অবস্থান মঞ্চে ছিলেন তিনিও। সরকারের তরফে কোন সাড়া না পাওয়ায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তিনি। শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ায় কদিন আগে বাড়ি ফিরে যান তিনি। রাজধানী লাগোয়া আড়ালিয়ার নোয়ানিয়ামুড়ায়।
খোয়াই জেলায় স্নাতক শিক্ষক হিসাবে কর্মরত ছিলেন তিনি। ৯০ বছরের বেশী বয়সী বৃদ্ধ বাবা সহ পরিবারের লোকদের ভরনপোষণ কিভাবে করবেন চাকুরী চলে যাওয়ার পর থেকে এই চিন্তা করতেন সর্বক্ষণ। প্রয়াত সহকর্মীর মৃতদেহ রাজপথে শায়িত রেখে শিক্ষামন্ত্রী হায় হায় শ্লোগান তুলে শোক বিহ্ববল সহকর্মীরা প্রশ্ন তুলেন – আর কত শিক্ষকের প্রান গেলে মন গলবে সরকারের!
