
বিনীতা দত্ত
চীনের মহিলা সাংবাদিক ঝাং ঝান উহান প্রদেশে করোনার প্রাদুর্ভাব নিয়ে খবর প্রকাশ করেছিলেন। সেই অভিযোগে সাংহাই কোর্ট গত ২৮শে ডিসেম্বর তাঁকে চার বছরের কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছে। তাঁর আইনজীবী ঝাং কে কে সংবাদ মাধ্যমকে এ কথা জানিয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে অভিযোগ আনা হয়েছে যে ৩৭ বছর বয়সী এই মহিলা সাংবাদিক গন্ডগোল বাধাতে প্ররোচনা দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে, এর আগেও চীনা সরকার মানবাধিকার আন্দোলনের কর্মীদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ এনেছে ও শাস্তি দিয়েছে। শুধু তাই নয়, গত মার্চ মাসেও কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের সময় চীন সরকার নিউ ইয়র্ক টাইমস্, ওয়াশিংটন পোস্ট, ওয়াল স্ট্রীট জার্নাল এবং আরো অন্যান্য বিদেশী সাংবাদিকদের চীন থেকে চলে যেতে বাধ্য করে।অভিযোগে প্রকাশ এর আগে বিভিন্ন অজুহাতে চীনা সরকার ৪৭ জন সাংবাদিককে শাস্তি দিয়েছে।
প্রাক্তন আইনজীবী ঝাং ঝান গত ফেব্রুয়ারীর প্রথম দিকে উহান প্রদেশে যান এবং করোনার ছড়িয়ে পড়া সম্পর্কিত ছবি ও ভিডিও তাঁর স্মার্ট ফোনে তুলে সংবাদমাধ্যমে পাঠাতে থাকেন। তিন মাসের বেশী সময় ধরে তিনি লক ডাউন এবং সেই কারণে অধিবাসীদের যন্ত্রণাময় জীবনযাত্রার কথা ভিডিওতে তুলে ধরেন। তিনি হাসপাতালের উপচে পড়া ভীড় এবং শূন্য দোকান-বাজারের ছবি প্রকাশ করেন। তাঁর ছবি এবং ভিডিও উইচ্যাট, ট্যুইটার এবং ইউ টিউবের মাধ্যমে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। উল্লেখ করা যেতে, ট্যুইটার এবং ইউ টিউব চীনে প্রদর্শন নিষিদ্ধ। কিন্তু হঠাৎ করেই মে মাসের মাঝামাঝি থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর পোষ্টগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়। পুলিশ তাঁকে জোর করে উহান থেকে সাংহাই ফিরিয়ে আনে এবং সাত মাস ধরে আটকে রেথে দেয়।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বক্তব্য, তাঁকে আটকে রাখার সময় ঝাং অনশন শুরু করেন। তখন তাঁকে জোর করে খাওয়ানোর চেষ্টা করা হয়, যা অত্যাচারেরই নামান্তর। ঝাং-এর আইনজীবী ঝাং কে কে ডিসেম্বরের প্রথমদিকে ঝাং-এর সঙ্গে দেখা করেন এবং জানান যে নাক এবং মুখ দিয়ে নলের মাধ্যমে তাঁকে খাওয়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি যাতে বাধা না দিতে পারেন সে জন্য তাঁর হাতদুটিও বেঁধে দেওয়া হয়েছে। ঝাং জানিয়েছেন তিনি মাথাব্যথা, গলা ও পাকস্থলীর ব্যথায় ভুগছেন। তাঁর আইনজীবী আরও জানিয়েছেন, হুইল চেয়ারে করে যখন ঝাংকে আনা হয় তখন তাঁকে অত্যন্ত দুর্বল দেখাচ্ছিল।
ঝাং-এর আইনজীবী জানিয়েছেন, সাংবাদিক ঝাং ঝানের বিরুদ্ধে সরকার যে সমস্ত অভিযোগ এনেছেন, সরকারী আইনজীবীরা তার কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ দেখাতে পারেনি।
ঝাং ঝান হলেন বিশ্বের প্রথম সাংবাদিক, যিনি কোভিড-১৯ সম্পর্কিত সংবাদ প্রচারের জন্য দোষী সাব্যস্ত হলেন।
